কালবেলা PDF Download (সমরেশ মজুমদার) full

সমরেশ মজুমদারের অসাধারণ একটি সৃষ্টি এই “কালবেলা” । এই “কালবেলা” উপন্যাসটির জন্য তিনি ১৯৮৪ সালে সাহিত্যে আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন । ২০০৯ সালে গৌতম ঘোষের পরিচালনায় এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও পাউলি দাম অভিনীত একই শিরোনামে একটি সিনেমাও মুক্তি পায় এই উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে । সুতরাং, নির্দ্বিধায় পড়ে ফেলতে পারেন এই অসাধারণ বইটি ।

সমরেশ মজুমদারের “কালবেলা” এমন একটি উপন্যাস যেখানে প্রেম এবং বিপ্লব একসাথে মিলেমিশে হয়েছে একাকার । “কালবেলা” । যার মানে অশুভ সময় । “কালবেলা” আসলেই একটি অশুভ সময়ের চিত্র উপস্থাপন করেছে । যেই চিত্রে আদর্শের পথে হাঁটতে গিয়ে বিপথগামী হয়েছে তৎকালীন অসংখ্য ভারতীয় তরুণ । তাদের মধ্যে অনিমেষও একজন ।

মূলত অনিমেষের হাত ধরেই সমগ্র উপন্যাসে সমরেশ মজুমদার তুলে ধরেছেন তৎকালীন সময়টিকে । আর অনিমেষের সঙ্গী হিসেবে জুড়ে দিয়েছেন মাধবীলতাকে। অনিমেষ আর মাধবীলতার যে প্রেমের সম্পর্ক তা এই উপন্যাসের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে টপকিয়ে খুব সহজেই এটিকে একটি প্রেমের উপন্যাসে পরিণত করেছে । সুতরাং, “কালবেলা” যেমন একটি রাজনৈতিক উপন্যাস তেমনি একটি প্রেমের বা ভালোবাসারও উপন্যাস হিসেবেও এটি সম্পূর্ণ সার্থক । অবশ্য সমরেশ মজুমদার এটিকে রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবে দেখতে নারাজ । তিনি এটিকে একটি ভালোবাসার উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃতি দিতেই আগ্রহী ।

kalbela By Samaresh Majumdar book info:

Book কালবেলা
Author
Publisher
type pdf
Edition 2nd Edition, 2013
Number of Pages 632
Country ভারত
Language বাংলা

রিভিউ

রাজনীতিকে ছাপিয়ে প্রেমের গল্প ‘কালবেলা’

সমরেশ মজুমদারের মোহিনী পড়েছেন ক’জনে! অনেকের ভাল লাগেনি, তাইতো! আমার বড্ড ভাল লেগেছিল, কারণ আমি গল্পের ভেতরে আরেক গল্প আবিস্কারের নেশায় বই পড়ি। কালবেলাকে মোহিনীর সাথে তুলনা করবো না, তবে আবিস্কারের নেশায় কালবেলা তেমনই এক উপন্যাস। গভীর রাজনীতির মাঝেও প্রেম খুঁজে পেয়েছি, মোহিনীতে পেয়েছিলাম এক মানুষ নারীকে, প্রাণবন্ত সে নারী। আসলে খুঁজতে হয়েছে, রাজনীতি পছন্দের নয় কিনা! বিশাল সাইজের চিত্রপট নিয়ে সিরিজ বইয়ের দ্বিতীয় এটি, এত বড় সিরিজ লিখতে গেলেই লেখকের ব্যক্তিসত্ত্বা এমনিতেই উঠে আসে। মানে সমরেশের ব্যক্তিজীবন। উনি অবশ্য কিঞ্চিৎ অস্বীকার করেছিলেন। সে করুক, সমরেশ মজুমদার যে অনিমেষের মাঝে আপন সত্ত্বার বীজ বপন করে কালবেলা লিখেছিলেন তা অস্বীকার করার উপায় এই। আসুন একটু হিন্ট দেই,
গর্ভধারিনী লেখার পরে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে, সদ্য ক্ষমতায় সিপিআই। আষ্টেপৃষ্ঠে মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট। এদেরই শাখাপ্রশাখা নকশাল আন্দোলন করেছিল। ক্ষমতায় আসার পরে রাজবন্দীদের মুক্তি, ফৌজদারী মামলা তুলে নেওয়ার সব কিছুই করেছিল সিপিআই। উদ্দেশ্য শুরুর আদর্শের সবাইকে আবার একভূত করা। ঠিক সেগুলো পরিষ্কারভাবে এসেছে কালবেলায়। যে কথা বলছিলাম, গর্ভধারিনী লেখার পরে সমরেশ মজুমদারকে সিপিআই মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন গর্ভধারিনী বইটি কমিউনিস্ট পার্টির দলিল হিসাবে ঘোষণা দাও, লাখ কপি বিক্রি হবে।

লেখক অবশ্য সেকথা শোনেননি যদিও তার ভেতরে কমিউনিজমের আদর্শই ছিল ঠিক একই জিনিস তিনি বইটির মুখ্য চরিত্র অনিমেষে দেখিয়েছিলেন। এখানে কথা আছে, অভিজ্ঞতা কথা বলে। হয়ত কিছুটা চিন্তাও কাজ করছিল, গতানুগতিক রাজনীতির বই তাও যদি শুধু কমিউনিস্টদের নিয়ে হয় তবে বইটি হয়ে যায় বিশেষ শ্রেণীর। সে সময়কার চরম জনপ্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদার বেশ ডিপ্লোমেটিক ছিলেন বোঝা যায়, তিনি কালবেলায় নিয়ে এলেন প্রেম। আহা যেই সেই প্রেম নয়, মাধবীলতার লদকালদকি প্রেম। বিশ্বাস করুন, শুধু সামাজিক ও রাজনৈতিক উপন্যাস হলে মাধবীলতা চরিত্রের কোন দরকারই ছিল না। কিন্তু অভিজ্ঞ এই লেখক কেন বিশেষ গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকবেন! দেশ পত্রিকায় যখন উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে, উঠতি বয়সী রোম্যান্টিক পড়ুয়ারা দেদারছে কিনেছে পত্রিকা। তৎকালীন সাহিত্য সমালোচকরা বলেছিলেন গোপনে গোপনে সরকারপক্ষও বইটির প্রচারে সহায়তা করেছিল। ওই যে কারণ পটভূমিতে পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট। আরেকটা জিনিস খেয়াল করবেন, উত্তরবঙের জলপাইগুড়ি থেকে কোলকাতায় এসেছিলেন অনিমেষ। লেখক নিজেই কিন্তু তাই! এটা অবশ্য সমস্যা না, লেখক তার চেনা পট, পরিবেশ নিয়ে লিখবেন এটা অন্যায় নয়।

কি আছে ‘কালবেলা’য়ঃ

কী নেই বলুন! একটুতো বললামই, রাজনীতি আর প্রেম। হ্যাঁ ওটা মুখ্যা ওটা ছাড়াও রয়েছে। তার আগে গল্পে আলোকপাত করা যাক।
পাহাড় বেলাভুমের চঞ্চল জলপাইগুড়ি, কাঞ্চনজঙ্গার শীতল আবহাওয়া ছেড়ে উপন্যাসের নায়ক অনিমেষ চলে আসে কোলকাতায়। এটা অবশ্য গর্বধারিনীতেই ছিলো।

কোলকাতায় আসার প্রথম দিনে পুলিশ ও মিছিলকারীদের মাঝে বুলেটবিদ্ধ হয় অনিমেষ। মিশনারী কলেজ স্কটিশ চার্চে ভর্তি হয়ে যে হোস্টেলে তার জায়গা হয়েছিলো সেখানে ছিল জামসেদপুরের ধনীর দুলাল তরুন কবি ত্রিদিব সেনগুপ্ত। ক্ষণে ক্ষণে কবিতা আর নেশার আভরণে ডুবে থাকা ত্রিদিবের সাথে ভাল সখ্যতা হয় অনিমেষের। বাংলায় এমএর ছাত্র অলক্ষ্যে জড়িয়ে পড়ে কমিউনিজমে, স্বপ্ন সাম্যের ভারতবর্ষ গড়ে তোলা।

জলপাইগুড়ির মত পাহাড়ি এলাকা থেকে আসা অনিমেষ তখনো বুঝতে পারেনি রাজনীতির ভেতরেও গভীর বিষাক্ত নগ্নতা রয়েছে। চোখের সামনে ভাগ হতে দেখেছে আদর্শকে। রাজনীতিতে যখন গভীরভাবে অনিমেষ ডুববে তখনই তার জীবনে এলো সহপাঠিনী মাধবীলতা। ধনীর দুলালী মাধবীলতা রাজনীতিতে আকৃষ্ট না হলেও অনিমেষে সঁপে দিয়েছিল নিজেকে। একেবারে গভীরভাবে। একদিকে রাজনীতি অন্যদিকে প্রেম দুটোর মাঝে ব্যাল্যান্স করেছে অনিমেষ। মাধবীলতা তার জগতজূড়ে থাকা অনিমেষকে নিয়ে ভালবাসাছাড়া বিশেষ ভাবনা ছিল না। এদিকে দলীয় কোন্দলে ভাগ হয়ে যায় সুভাষ এবং হয়ে ধীরে ধীরে গড়ে তোলে বিদ্রোহী গ্রুপ। আদর্শ বিবর্জিত নেতাদের ছেড়ে অনিমেষও ভিড়ে যায় সুভাষের সাথে সশস্ত্র আন্দোলনে, নকশালবাদ। একে একে হারিয়েছিল বন্ধু কবি ত্রিবিদ সেনগুপ্ত। সুভাষ’দাকেও।

দীর্ঘ এই পরিক্রমায় মাধবীলতা কখনো অনিমেষের উপরে বিশ্বাস হারায়নি। আন্দোলনে পাশে না থাকলেও ব্যক্তিজীবনে সুখ ছড়িয়েছে তারা। সুখ-প্রেমের সেই গভীর ভাবনা লেখক সজীব রেখেছিলেন কালবেলায়। গ্রেফতার হয়ে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে পঙ্গু হয় অনিমেষ।
অনিমেষ পঙ্গু হয়ে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিল। এতদিনে মাধবীলতা নিজেকে বিকিয়ে দেয়নি। যে শরীর সে অনিমেষকে দিয়েছিল সেই শরীরের বয়েছে অনিমেষের রক্তও। একমাত্র পুত্র সন্তানকে নিয়ে জীর্ণশীর্ণ সেই বাড়িতেই ওঠে অনিমেষ। তিনটে মানুষের সে ঘর। শারীরিক অক্ষমতা, দারিদ্র, মাথার ওপরে শীর্ণ চাল থাকলেও সেখানে মাধবীলতার ভালবাসা ছিল। আর ফলাফল স্বরূপ সন্তান। যে ভালবাসা হৃদয়ের সেখানে বিশ্বাসের বন্ধন ছিল, সামাজিক বিয়ের দরকার হয়নি তবুও সে মাধবীলতা মিত্র। অনিমেষ মিত্রের স্ত্রী।

ব্যক্তিগত মতামতঃ

নিখাদ রাজনৈতিক উপন্যাস ‘কালবেলা’ তবে রাজনীতি খুব বেশি পছন্দের নয় বলে আমি বইটিকে বলব অপরাজনীতির সুন্দর বিবরণ। অপরাজনীতি যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার বাস্তব দৃশ্যপট পশ্চিমবঙ্গ। একই সময়ে যখন ভারতের অন্য প্রদেশগুলো সমৃদ্ধি করেছে পশ্চিমবঙ্গ খুইয়েছে ঐতিহ্য। অথচ কী ছিলনা তাদের। নকশালবাদ, বামরাজনীতি নিঃশেষ করে দিয়েছে।

লেখক নিজে কমিউনিস্ট বলে একটা ভালোর শেষ দেখিয়েছেন। কিন্তু বইটি জুড়ে তিনি দেখিয়েছেন সেই অপরাজনীতির অবক্ষয়ের চিত্র, রক্তপাত হানাহানি। সেই রাজনীতির কথা বলতে গিয়ে এই জনপ্রিয় লেখক মুদ্রার অন্য পিঠের কোন চিত্রের শিক্ষা দেখাতে পারেননি। বাতলে দিতে পারেননি কেন ঘটলো।

টাইটেল দিয়েছিলাম, রাজনীতিকে ছাপিয়ে প্রেমের গল্প ‘কালবেলা’। ঠিক এখানে রেখেছেন দারুণ সব বার্তা, বলা চলে প্রেমের বার্তা। নারী ও ভালবাসার সংগ্রামের বার্তা। চরম বাস্তববাদী রাজনীতির সাথে সাথে প্রেম পছন্দ করেননা এমন পাঠকের উপন্যাস নয় ‘কালবেলা’। তবে একটা মেয়ে ভালবাসার দায়বদ্ধতাকে ছাপিয়ে কীভাবে পরিপূর্ণ নারী হয়ে উঠতে পারে সেটার জীবন্ত উদাহরণ মাধবীলতা। লেখক হয়ত অনিমেষকে নেতা নয় বরং বিদ্রোহীই রাখতে চেয়েছিলেন বলে মাধবীলতাকে গণ্ডীতে আবদ্ধ রেখেছিলেন।

শক্তিশালী লেখকদের লেখায় আমি রেটিং দেওয়া থেকে বিরত থাকি, বইটির জন্য লেখক আকাদেমি এওয়ার্ড পেয়েছিলেন। :

আমার কথা :

উত্তরাধিকারের তুলনায় কালবেলা আমার একটু কম ভাল লেগেছে। সম্ভবত রাজনৈতিক ব্যাপার স্যাপার আছে বলেই। রাজনীতি ঠিক আমি ভাল করে বুঝিনা। বুঝতে কেন জানি ভালোও লাগে না। তবে মাধবীলতার উপস্থিতির জন্য উপন্যাসটা অনেকটা সহনশীল মাত্রায় ছিল।

অন্যদিকে সেই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজনীতিবিদ ও সমাজের হর্তাকর্তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক চিত্র আমাকে পুরোপুরি হতাশ করেছে। সমাজের এই কলুষিত দিক সামনে এলে আসলেই একটু অস্বস্তি লাগে। সম্পূর্ণ নতুন একটা দেশে জনসেবামূলক কর্মকান্ডের চেয়ে নিজের পকেট ভরতেই যেন ব্যস্ত ছিল সবাই। সব মিলিয়ে তৎকালীন সমাজ সভ্যতার এক অপূর্ব প্রাসঙ্গিক চিত্র যেন কালবেলা। ভালো লাগবে সবার এই কামনা করি।

Kaalbela pdf

সমরেশ মজুমদারের “কালবেলা” এমন একটি উপন্যাস যেখানে প্রেম এবং বিপ্লব একসাথে মিলেমিশে হয়েছে একাকার । “কালবেলা” । যার মানে অশুভ সময় । “কালবেলা” আসলেই একটি অশুভ সময়ের চিত্র উপস্থাপন করেছে । যেই চিত্রে আদর্শের পথে হাঁটতে গিয়ে বিপথগামী হয়েছে তৎকালীন অসংখ্য ভারতীয় তরুণ । তাদের মধ্যে অনিমেষও একজন । মূলত অনিমেষের হাত ধরেই সমগ্র উপন্যাসে সমরেশ মজুমদার তুলে ধরেছেন তৎকালীন সময়টিকে । আর অনিমেষের সঙ্গী হিসেবে জুড়ে দিয়েছেন মাধবীলতাকে । অনিমেষ আর মাধবীলতার যে প্রেমের সম্পর্ক তা এই উপন্যাসের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে টপকিয়ে খুব সহজেই এটিকে একটি প্রেমের উপন্যাসে পরিণত করেছে । সুতরাং, “কালবেলা” যেমন একটি রাজনৈতিক উপন্যাস তেমনি একটি প্রেমের বা ভালোবাসারও উপন্যাস হিসেবেও এটি সম্পূর্ণ সার্থক । অবশ্য সমরেশ মজুমদার এটিকে রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবে দেখতে নারাজ । তিনি এটিকে একটি ভালোবাসার উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃতি দিতেই আগ্রহী ।

Kalbela book pdf by Samaresh Majumder –

Download

 কালবেলা PDF –   View or Read This Full BookLink 2Link 3 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *