অর্গানিক ফুড বা জৈব খাদ্য কি?
“অর্গানিক ফুড”- শব্দটি বর্তমানে চারিদিকে খুব বেশিই শোনা যাচ্ছে। আসলে কী এই অর্গানিক ফুড।
বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক সার,কীটনাশক,আগাছা দমন কারী,বিভিন্ন প্রকার হরমোন ইত্যাদি ব্যাবহার না করে বা সহজ কথায় কোন কৃত্রিম এজেন্ট ব্যাবহার না করে ফসল চক্র স্বাভাবিক রেখে বিভিন্নরকম জৈব সার ব্যবহার করে যেমন,কেঁচো-সার(Vermicast),ট্রাইকো-কম্পোস্ট (Tricho-compost) ইত্যাদি এবং কীটনাশক ব্যাবহার না করে সেক্স ফেরোমন ট্রাপ(Sex pheromone trap) -এর মত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বালাই দমন এর মাধ্যমে শাক-সবজি ও ফল-মূল উৎপাদন করলে তাকেই বলাহয় অর্গানিক ফুড বা জৈব খাদ্য।মুলত এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের উদ্দেশ্যই হলো কৃত্রিমতা মুক্ত এবং একিসাথে বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদন।
অর্গানিক ফুড বা জৈব খাদ্য-এর
ইতিহাস:
স্বাভাবিক ভাবে আদিম কাল থেকেই অর্গানিক ফুড এর চাষাবাদ হয়ে আসছে।পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিলো কম।সকলের খাদ্যের চাহিদা স্থানীয় ভাবেই পূরণ হয়ে যেতো।এর পর মানুষ বিভিন্ন প্রযুক্তিতে উন্নতি সাধন করতে থাকলো।ফলে বাড়তে থাকলো মানুষের জীবনযাত্রার মান।একই সাথে মানব সম্প্রদায়ের আকারো কিন্তু বড়ো হচ্ছিলো।ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য পাল্লাদিয়ে বাড়ানো যাচ্ছিলোনা খাদ্যের যোগান।ফলে ক্ষুদার্থ পৃথিবীকে পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করতে শুরু হয় নানা ধরনের গবেষণা।কিভাবে অল্প পরিমান জায়গায় বেশিপরিমাণ ফসল উৎপাদন করা যায় তা নিয়ে গবেষণা করতে করতে ১৯শতকেই রাসায়নিক সারের উদ্ভাবন ঘটে।১৯৪০ সাল নাগাদ প্রায় সম্পূর্ণরূপেই পৃথিবী রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক নির্ভর হয়ে যায়।ষাঁটের দশকে ঘটেযায় সবুজ বিপ্লব।এতেকরে খাদ্যের চাহিদা ঠিকই মিটেছে কিন্তু খাদ্য হারিয়েছে তার পুষ্টিগুণ।ফলে মানব শরিরে রোগবালাই বেড়েই চলেছে।খাদ্যের হারানো পুষ্টিগুণ ফিরে পেতে মানুষ ফিরে যায় আবার সেই আদিম কৃষি পদ্ধতির কাছে।১৯৯০ সালের পর থেকে বিশ্বজুড়ে অর্গানিক চাষাবাদ দ্রুত বাড়তে থাকে।বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অনেক বড় অর্গানিক ফুড বা জৈব খাদ্য এর বাজার সৃষ্টি হয়েছে।মানুষ হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে অর্গানিক ফুড এর বিশ্বাসযোগ্য উৎস।
অর্গানিক ফুড বা জৈব খাদ্য খাওয়া কেন প্রয়োজন:
এতক্ষণে আমরা নিশ্চয়ই বুঝেগেছি যে অর্গানিক ফুড আমাদের শরীরের জন্য কতটা প্রয়োজনীয় হওয়ার কারনে আমরা আবার অর্গানিক এর কাছে ফির এসেছি।
অর্গানিক খাবারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নিচে কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরা হলো:
-
জৈব খাবার আপনার খাদ্যের রাসায়নিকের পরিমাণ হ্রাস করে, যেমন; স্থায়ী কীটনাশক।
-
জিএমও খাবার(জিনগতভাবে পরিবর্তিত খাবার) এড়িয়ে চলা যায়।
-
জৈব খাবারে কোন কৃত্রিম রং, স্বাদ বা প্রিজারভেটিভ দেওয়া হয় না।
-
অর্গানিক চাষ সুস্থ মাটি তৈরি করে। স্বাস্থ্যকর মাটি স্বাস্থ্যকর খাবার এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করে।
-
জৈব খাবারে প্রচলিত খাবারের চেয়ে বেশি পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, এনজাইম এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট থাকে।
-
বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমাতে অর্গানিক চাষাবাদ সাহায্য করে।
-
জৈব খামারগুলোর ফসল পরাগায়ন-বান্ধব হয়ে থাকে যা মৌমাছি, পরাগায়নকারী কীট এবং বন্যপ্রাণীকে বিষাক্ত রাসায়নিক থেকে রক্ষা করে।
-
চাষিরা ক্ষতিকর রাসায়নিক এবং কীটনাশক এর বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা পায়।
বাংলাদেশে অর্গানিক ফুড:
বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ।কৃষি কাজ একদেশর মানুষের রন্দ্রে রন্দ্রে জড়িয়ে আছে।মধ্যস্থ ভোগিদের দৌরাত্ম্যের কারণে কৃত্রিম সংকট তৈরি হলেও মৌসুমগুলোতে শাকসবজি এবং ফলমূলের ব্যাপক উৎপাদন হয় আমাদের দেশে।কৃষক পর্যায়ে সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার হলেও বিপনন পর্যায় ব্যাবহার হচ্ছে ইচ্ছে মতো বিষাক্ত রাসায়নিক।কার্বাইড,ফরমালিন,মেলামাইন,ক্রোমিয়াম ইত্যাদি কঠিন কঠিন রাসায়নিকের নামতো এই দেশের মানুষের মুখে মুখে।তার উপর খাদ্যের চাকচিক্য বাড়াতে মবিল,ফুড কালারের নামে টেক্সটাইলের রঙ,ইউরিয়া-হাইড্রোজ,,স্যাকারিন,অ্যালাইল আইসো-থায়োসায়ানাইড,ন্যাপথলিন,সিলডেনাফিল সাইট্রেট ইত্যাদি আরো নানান ধরনের রাসায়নিক তো ব্যবহার হচ্ছেই।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশের জন্য অর্গানিক ফুডের কোন বিকল্প নেই।ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে অর্গানিক ফুডের অনেক বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে।বিভিন্ন সুপার সপগুলতে দেশী এবং বিদেশ থেকে আমদানিকৃত বিভিন্ন ধরনের জৈব খাদ্য।যদিও বাজারের সাধারন শাকসবজি এবং ফলমূলের চেয়ে দাম একটু বেশি তার পর ও বিষমুক্ত খাবার হওয়ায় ভোক্তারাও দেখাচ্ছেন বাড়তি আগ্রহ।
অর্গানিক ফুড উৎপাদন আমাদের দেশের সাধারণ কৃষকদের জন্য খুবি কষ্টসাধ্য বিষয়।এই পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করলে একদিকে যেমন ফলন কম হয় ঠিক একিভাবে খরচও বেড়ে যায়।আবার গ্রামের সাধারণ বাজারগুলোতেও এই ফসল গুলোর জন্য আলাদাভাবে কোন দামও পাওয়া যায় না।ফলে সাধারন কৃষকরা প্রচলিত কৃষি পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করতেই উৎসাহ বোধ করে।
তবে বর্তমানে সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ কৃষকদের কে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করছে।সর্বোপরি এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় যে অর্গানিক ফুড বা জৈব খাদ্য বাংলাদেশে একটি উদীয়মান সেক্টর।
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল আর অর্গানিক ফুড বা জৈব খাদ্য সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা বহন করে। তাই আমাদের উচিৎ হবে এই সেক্টরটিকে আরো উৎসাহিত করা এবং সম্প্রসারিত করা।
অনেক কিছু জানতে পারলাম এখান থেকে।
ধন্যবাদ