Sojan Badiyar Ghat PDF (Ebook) Download
book সোজন বাদিয়ার ঘাট
Author জসীম উদদীন
Publisher পলাশ প্রকাশনী
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা
Download link: Sojan Badiyar Ghat PDF (Ebook) – link2 direct
– Download Now or [ Download PDF ]
শিমুলতলী গ্রামে বাস করে দুটি সম্প্রদায়, হিন্দু এবং মুসলিম। দুটি ভিন্ন সম্প্রদায় হলেও তাদের মধ্যকার সম্পর্ক থাকে ভ্রাতৃত্বের চেয়েও বেশী। দেখা যায় মুসলিম বাড়িতে কেউ মারা গেলে তার জন্য হিন্দু বাড়ির তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বলে। আবার হিন্দু বাড়িতে ছেলে অসুস্থ হলে তার জন্য পানি পড়া দেন মুসলিম পীর সাহেব। এক কথায় পুরো গ্রামটি মিলে একটি পরিবারের রূপ নেয়। যেখানে প্রত্যেকেই অপরের শুভাকাঙ্ক্ষী। এই গ্রামেরই নমুদের নেতা গদাই মোড়লের চঞ্চল কন্যা দুলালী, যার ডাকনাম দুলী।
সদা উড়ে বেড়ান পাখির ন্যায় দুলীও ঘুরে বেড়ায় পুরো গ্রাম জুড়ে। তার সব সময়ের সাথী একই গ্রামের দমির শেখের ছেলে সোজন। ছোটবেলা থেকেই একে অপরের খেলার সাথী, একে অপরের পরম আপনজন। সোজন কখনো পেছন থেকে দুলীকে ডাক দিলে, দুলীর পাকা আম কুড়িয়ে পাওয়ার মত আনন্দ হয়। দুলীর ইচ্ছে হয়, সিঁদুরের কৌটোয় সোজনকে আপন করে লুকিয়ে রাখতে। আবার সোজনের ইচ্ছে বড় হয়ে তার বাড়ির আঙ্গিনায় কুমড়ো চাষ করবে, তবে তা সবজীর জন্য নয়, দুলী যদি শখের বসে একটি কুমড়ো ফুল খোপায় বাঁধে!
একসময় মুসলিমদের মহরম অনুষ্ঠানে শিমুলতলীর হিন্দুদের মারধোর করে পাশের গ্রামের মুসলিমরা। এতে করে তারা নায়েব মশায়ের কাছে বিচারের জন্য গেলে হিন্দু নায়েব তার স্ব সম্প্রদায়ের লোকদের প্রতিশোধ নিতে ক্ষেপিয়ে তোলেন। এবং তা শিমুলতলীর নিরীহ মুসলমানদের প্রতি। কিন্তু শিমুলতলীর হিন্দুরা তাদের প্রতিবেশী, ভ্রাতৃসম শিমুলতলীর মুসলিমদের প্রতি প্রতিশোধ নিতে অপারগতা জানায়। এতে করে ক্ষেপে যান হিন্দু নায়েব। অত:পর তিনি হিন্দুদের দেব-দেবীর আক্ষ্যা দিয়ে প্রতিশোধে উদ্বুদ্ধ করেন। হিন্দুদের এই আক্রমণের সংবাদ মুসলিমরা আগেই পেয়ে থাকে, তাই রাতের অন্ধকারে তারা প্রিয় গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু শেষ সময়ে এসে যে হিন্দুরা তাদের প্রতিবেশীর প্রতি আক্রমণের মত পাল্টায় তা মুসলিমরা কখনোই জানতে পারে না।
এক পর্যায়ে সমাজের চোখে ছেলে-মেয়ে দুটো বড় হয় এবং দুলীর অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়। তখন দুলী বুঝতে পারে যে তার ছোটবেলার খেলার সাথী সোজনকে ছেড়ে যেতে পারবে না। সে তার একটাও মন সোজনকে দিয়ে ফেলেছি, চাইলেই কুমড়োর ফালির মত কেটে কেটে সবাইকে বিতরণ করতে পারবে না। বিয়ের দিনে দুলী, সোজনকে আড়ালে ডেকে তার মনের কথা খুলে বলে। সোজনের নিজের সাথে মিলে গেলেও সে তার পরিবার, সম্প্রদায়ের কথা ভেবে দুলীকে বোঝাতে চেষ্টা করে। এবং যখন দুলী আকাশ-বাতাস সাক্ষী রেখে সোজনকে স্বামী বলে ঘোষণা করে তখন আর সোজনের কিছুই করার থাকে না।
Review2:
বিয়ের কনে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া প্রেমিক দেখেছি অনেক! পল্লিকবি জসীম উদদীন তাঁর কাব্যোপন্যাসে বিয়ের কনে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য রাখলেন ঠিকই কিন্তু তা অন্য সকল গল্প, নাটক, দৃশ্য থেকে সম্পূর্ণ আলাদা! ছোট বেলার বন্ধুর সাথে যে সারা জীবন এক টিনের চালের নিচে থাকতে হবে, এমন কি কোনো নিয়ম আছে? অনেকের জন্য নিয়ম নয় বরং রীতিমতো না থাকলে প্রাণ যায় যায় অবস্থা!
সেই অবস্থাকে ঘিরেই পাঠকের যত উৎসাহ!মুসলিম ঘরের ছেলে সোজন আর নমুর ঘরের দুলী কে নিয়েই লেখকের পথ চলা শুরু। একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতেই পারে না! দুলীকে যদি পিছন থেকে সোজন ডাক দেয় সেই ডাক শুনে তার এমন আনন্দ লাগে মনে হয় যেন পাকা আম কুড়িয়ে পাওয়ার চেয়েও বেশী কিছু! একদিন সকালে মায়ের বারন সত্তেও দুলী খেলতে গেল সোজনের সাথে! খেলতে গিয়ে দীঘির পারে মায়ের হাতে মার খাওয়ার পরও সোজনের কথা ভুলে না দুলী! সোজনের অসুখ করেছে দেখে সে যেই অবিস্মরণীয় কান্ড করে বসল তা করে না অনেক রাজ্যের রানীও! কোনো এক সংঘাতে মুসলিমরা শিমুল তলী গ্রাম ছেড়ে চলে গেল দূর অজানায়।
বিচ্ছেদ হয়ে গেল সোজন আর দুলীর! দেহ বিচ্ছেদ হলেও মন যেন সেই বনের গাছের ডালে বসা ‘বউ কথা কও পাখীর’ গান শুনছে একত্রে! বিয়ের পালা আসল দুলীর। সোজনকে খবর দিয়ে এনে দুলী হারিয়ে যেতে চাইল দূর অজানায়। সোজন চেষ্টা করল অবুঝ দুলীকে বোঝাতে! কিন্তু সে নাচোরবান্দিনী! চন্দ্র, তারা, গাছের শক্ত ডাল আর ছোট বেলার চারা লাগানো কিশোর বয়সী গাছকে সাক্ষী রেখে সোজনের হাত ধরে পালিয়ে গেল বিয়ের কনে, বালিকা দুলী! সবাই হাতে বল্লম, লাঠি নিয়ে ছুটল খুঁজতে! কিন্তু খুঁজে কি পেয়েছিল তাদেরকে? নাকি বনের গহীনে হারিয়ে গেল বালক বালিকা? খুঁজে পেলেও বা কি করেছিল তাদেরকে গ্রামের মানুষ? সকল উত্তর কবি জসীম উদদীন তাঁর মোহনীয় ছন্দে ছন্দে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন!মধুমতী নদীতে নৌকায় করে ভেসে বেড়ায় বেদের দল!
তাদের নেই কোনো ঠিকানা! উপরে আকাশের বিশালতা আর নিচে পানির থৈ থৈ শব্দ! জলের কুমিরের সাথে রাত কাটিয়ে দিতে কোনো বাঁধা নেই সেই বেদের দলের! সেখানেই আছে গল্পের প্রধান দুই চরিত্রের যে কোন একজন! কিন্তু কে সে? এই বেদের দলের সাথে সে কিভাবে মিশল আর কিই বা কাজ তার তাদের সাথে থেকে? তার সঙ্গীই বা কোথায়? যাকে ছাড়া সে থাকতে পারে না এক রাত, তাকে ছাড়া এখন কিভাবে রাতের পর রাত নদীর জলের উপর কাটিয়ে দিচ্ছে? এইসব উত্তর খুঁজতে কবির কোমল কলমের ডগার মিষ্টি গন্ধে আমার মতো হারিয়ে যেতে পারেন আপনিও!বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যোপন্যাস ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির যখন মাত্র ত্রিশ (30) বছর বয়স ঠিক তখনি রচনা করে ফেললেন এক অমর কাব্যোপন্যাস! যা পড়ে পুলকিত হয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!
প্রথম পৃষ্ঠা থেকে শেষ পৃষ্ঠা অবধি প্রতিটি ছন্দে মেতেছিলাম আমি। প্রতিটি দৃশ্যের কি সহজ সরল, সাবলীর, মোহনীয় ছন্দের উপস্থাপনা! প্রেমময় দৃশ্য গুলো যেন কবি রাত জেগে নদীর পারের ঠান্ডা হাওয়ায় বসে বসে রচনা করেছেন। কত বৈচিত্র্যময় এক পুলকিত ঘটনার দৃশ্য ছন্দে ছন্দে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন কবি জসীম উদদীন। সেজন্যই ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ সর্বাধিক বিদেশী ভাষায় অনূদিত বাংলা বই! চেকোশ্লাবিয়ার ভাষা বিদ এই কাব্যোপন্যাসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। “UNESCO” থেকে শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্ম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে “সোজন বাদিয়ার ঘাট” 1933 সাল থেকে 2002 পর্যন্ত মোট 16 বার এই অমর রচনার বইটি সংস্করণ করা হয়েছে! এটা থেকেই এই কাব্যোপন্যাসের জনপ্রিয়তা অনুমান করা যায়।এমন দুর্লভ একটি বই রকমারিতে দেখে আমি যারপরনাই আনন্দিত হয়েছি! তাই দেরী না করে বাঙলা সাহিত্যের প্রতিটি মানুষের প্রতি এই শ্রেষ্ঠ কাব্যোপন্যাসটি পড়ার জন্য অনুরোধ রইল! প্রতিটি ছন্দে শিহরিত, পুলকিত হবার এক অন্যরকম অনুভূতি পাবে পাঠক।
নাম : সোজন বাদিয়ার ঘাট
লেখক : পল্লী কবি জসিম উদদীন
প্রকাশন : পলাশ প্রকাশনী
ধরন : কবিতা
পৃষ্ঠা : ১৬০
পাঠ প্রতিক্রিয়া :
এখনকার দিনে আধুনিক কবিতা মানেই গদ্য কবিতা। কিন্তু গদ্য কবিতা আমাকে সেভাবে টানে না। আমার ভাল লাগে ছান্দসিক কবিতা গুলো। আর তখনই পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ সোজন বাদিয়ার ঘাট পড়ি। বইটি পড়েছি আর মুগ্ধ হয়েছি,,শুধুই মুগ্ধ হয়েছি। এই ইট কাঠ পাথরের শহর ছেড়ে আমারও চলে যেতে ইচ্ছে হয়েছে সেই গ্রামে।
ভেজা ঘাসে,মেঠো পথে হাঁটতে ইচ্ছে হয়েছে। যতই পড়েছি,ততই চোখের সামনে ভেসে উঠেছে গ্রামীন দুইজন কিশোর কিশোরীর ছবি।
ছোট বেলায় চতুর্থ শ্রেণী তে থাকতে একটি কবিতা পড়েছিলাম,
” গড়াই নদীর তীরে,
কুটির খানি লতাপাতা ফুল মায়া রয়েছে ঘিরে
বাতাসে হেলিয়া, আলোতে খেলিয়া সন্ধ্যা সকালে ফুটি,
উঠোনের কোনে বুনো ফুল গুলি হেসে হয় কুটি কুটি “